কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রাজস্ব শাখার দুই কর্মচারী বদলী বাণিজ্যে নেমেছেন। জেলার ভূমি প্রশাসনের ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের পছন্দসই ও সুবিধাজনক স্হানে বদলী করে দেয়ার মিশনে উপরস্হ কর্মমকর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে এরা হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। বিভিন্ন ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মচারীরা জানান, পছন্দমত স্হানে বদলী হতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রাজস্ব শাখার প্রধান সহকারী ওমর মিয়া ও অফিস সহকারী মোঃ শরীফের সাথে চুক্তি করতে হয়। অন্যথায় অপেক্ষাকৃত খারাপ পোস্টিংয়ে বদলী করা হয় অনেককে। জেলার ভূমি প্রশাসনের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের বদলীর তালিকা করার সময় এরা উপরস্হ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করার নামে এরা মোটা অংকের টাকা নেয়। এরপর কিছুদিন পরেই বদলীর আদেশ জারী হয়। এ অবস্হা চলে আসছে বহুদিন ধরে। ভূমি প্রশাসন সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, সম্প্রতি বিভিন্ন ইউনিয়ন ভূমি অফিসে বদলীর জন্য ১২ জন কর্মচারীর তালিকা প্রণয়ন করা হয়। পছন্দসই অফিসে পোষ্টিংয়ের জন্য এদের থেকে মাথাপিছু একলাখ টাকা করে নেয় উপরোক্ত ওমর-শরীফ সিন্ডিকেট। অফিসারদের ম্যানেজ করার কথা বলে এসব টাকা নেয়া হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানায়, রামু (সদর) ইউনিয়ন ভূমি অফিসে এলএমএসএস পদে কর্মরত ছৈয়দ নূর সদরের ঈদগাঁও ইউনিয়ন ভূমি অফিসে বদলী হয়ে আসার জন্য এদের সাথে লাখ টাকার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছেন। তাকে ঈদগাঁও ইউনিয়ন ভূমি অফিসে পোষ্টিং দিতে ইতিমধ্যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে তারা। এদিকে বহুল আলোচিত দূর্নীতিবাজ ছৈয়দ নূরের ঈদগাঁও ফিরে অাসার খবরে আতংক সৃষ্টি হয়েছে ভূমি অফিসের সেবাগ্রহীতা ও সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে। বর্তমানে রামু (সদর) ইউনিয়ন ভূমি অফিসে এমএলএসএস পদে কর্মরত ছৈয়দ নূর ইতিপূর্বে ইদগাঁওতে কর্মরত থাকলেও রকমারী অভিযোগে তাকে রামুতে শাস্তিমূলক বদলী করা হয়। ঈদগাঁওতে থাকালালীন বিভিন্ন অনিয়ম-দূর্ণীতি, নামজারী ও খতিয়ান বাণিজ্য, উপরস্হ কর্মকর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা আদায়, উমেদার নিয়োগ ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র গায়েব করার অভিযোগ উঠে তার বিরূদ্ধে। এসময় তিনি বেনামে অনেক খাসজমি বন্দোবস্তী করে নেন। তার মেয়েজামাই শুক্কুরকে উমেদার হিসাবে ঈদগাঁও ভূমি অফিসে প্রতিষ্ঠিত করেন ছৈয়দ নূর। সেই থেকে অত্র অফিসের অঘোষিত নিয়ন্ত্রক বনে গেছে অবৈধ উমেদার শুক্কুর। সরকারী অথবা মাষ্টার রোলভূক্ত কর্মচারী না হয়েও প্রতিদিন সরকারী বিভিন্ন গোপন নথিপত্র ও বালামবই ঘাটাঘাটি করে উমেদার শুকুর। বিগত প্রায় দেড়দশক ধরে এভাবে ধান্ধাবাজি করে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক বনে গেছে সে। ভূমিদস্যু হিসাবে পরিচিত পিয়ন ছৈয়দনূর এলাকায় অনেক অপকর্মের বলে জানিয়েছেন ভূক্তভোগীরা। জালালাবাদ খামার পাড়ার বাসিন্দা ছৈয়দ নুর খামার পাড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন স্হানে তার দুই স্ত্রীর নামে এককড়া জমি কিনে দূর্নীতির মাধ্যমে দশকড়া নামজারী করে নেন। এ নিয়ে তার বিরূদ্ধে আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে বলে জানান ভূক্তভোগী নাসিম উদ্দীন সিকদার। এ ছাড়াও ভূমিদস্যুতার অভিযোগে ২০১৪ সালে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বরাবরে ছৈয়দ নূরের বিরূদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন একই এলাকার ইমাম শরীফ লেদু। ভূমি অফিসে চাকরীর সুবাদে সেবাগ্রহীতাসহ বিভিন্ন শ্রেণীর জনগনকে হয়রানি করেন ছৈয়দনুর। একাধিক সূত্রে প্রকাশ, দক্ষিণ চট্টগ্রামের বৃহত্তম বাণিজ্যিক এলাকা ঈদগাঁও বাজারে অবস্হিত “টাকার খনি” খ্যাত ঈদগাঁও ভূমি অফিসে ফিরে আসার জন্য লাখ টাকার মিশনে নেমেছেন পিয়ন ছৈয়দ নূর। জালালাবাদ ইউনিয়নের পালাকাটা নিবাসী রাশেদ জানান, ছৈয়দ নূরের ঈদগাঁও ভূমি অফিসে আবারো বদলী হয়ে আসার ব্যাপারে নিশ্চিত করেছে ইতিপূর্বে তারই নিয়োগ করা এক উমেদার। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রাজস্ব শাখার প্রধান সহকারী ওমর মিয়া ও অফিস সহকারী মোঃ শরীফের সাথে এ ব্যাপারে ১ লাখ টাকার চুক্তি ও লেনদেনও হয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। বদলী বানিজ্যে অভিযুক্ত ওমর মিয়া ফোন রিসিভ না করায় এ ব্যাপারে বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। উপরোক্ত ব্যাপারে মোঃ শরীফ বলেন, “বদলী আমরা করিনা, স্যারেরা করেন”। এদিকে ছৈয়দ নূর আবারো ঈদগাঁওতে বদলী হয়ে আসার খবরে ঈদগাঁওতে আতংক সৃষ্টি হয়েছে। যে কোন মূল্যে ঈদগাঁও ভূমি অফিসে আসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে সে। উপরোক্ত সব ব্যাপারে অভিযুক্ত ছৈয়দ নূর ফোন (০১৮২৪-৮৮১৭৫১) রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
মীর মোহাম্মদ শাহীন। কর্মসংস্থান ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার। ২০১১ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সিনিয়র অফিসার হিসেবে ...
পাঠকের মতামত